মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) উত্তরা-মতিঝিল-উত্তরায় চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার থেকে যাত্রীরা এ পথে চলাচল করতে পারবে। পুরোদমে এ প্রকল্প চালু হলে যাত্রীদের সময় বাঁচবে, কার্বন নিঃসরণ কমবে এবং শহরের যানজট কমাবে। এসবের আর্থিক মূল্য দাঁড়াবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
যেভাবে শুরু কর্মপরিকল্পনা
ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ৬(ছয়)টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, ডিএমটিসিএল-এর আওতায় একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার নিমিত্ত সরকার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এই কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৭টি স্টেশন বিশিষ্ট বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ এর নির্মাণ কাজের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এখন শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন হতে আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে মেট্রো ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে।
ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম রেলপথ এমআরটি লাইন-৬। বাংলাদেশের প্রথম এ দ্রুতগামী গণপরিবহন রেলপথ ২০২২ সাল থেকে সেবা প্রদান করে আসছে। এই সম্পূর্ণরূপে উড়াল রেলপথ উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন বর্তমানে চালু রয়েছে।
এমআরটি লাইন-৬ রেলপথ জামিলুর রেজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার পর্যালোচনা কমিটি কর্তৃক ঢাকায় দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা’র প্রস্তুত করা শহুরে পরিবহন গঠন গবেষণার ফলাফল।
২০১৬ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করা এই রেলপথের নির্মাণকাজ গুলশান হামলা ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে কয়েকবার বিলম্বিত হয়।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এর প্রথম পর্যায় (উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবার ফলে উত্তরা থেকে সরাসরি মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে চলাচল করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে এমআরটি লাইন-৬ উত্তরে টঙ্গী ও সাভার উপজেলা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।মেট্রোরেল প্রকল্প যেভাবে শুরু হলো
২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারকে ঢাকায় একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা নির্মাণ করার জন্য সুপারিশ করে। একই বছরে মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লুই বার্জার গ্রুপ ঢাকার জন্য একটি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রস্তুত করে। বিশ্ব ব্যাংক এই খসড়া পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করলেও প্রথমে কোন দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার সুপারিশ ছিল না।
নির্মাণ প্রকৌশলী ও জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এই পরিকল্পনা পর্যালোচনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে পর্যালোচনা দল পরিকল্পনায় দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার তিন বছর পরে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা মেট্রোরেল প্রকল্পে যোগ দেয়। শহুরে পরিবহন গঠন গবেষণায় জাইকা প্রস্তাবিত রেলপথগুলোর মধ্যে এমআরটি লাইন ৬-কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করেছিলো। ২০১০–২০১১ অর্থবছরে এই লাইন নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
২০১১ সালে রেলপথের জন্য একটি খসড়া যাত্রাপথের মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়। মানচিত্র অনুযায়ী রেলপথটি উত্তরা থেকে সায়দাবাদ পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিলো। প্রস্তাবিত বিজয় সরণি স্টেশন বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের সামনে নির্মিত হওয়ার কথা ছিলো, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে স্টেশনটি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়।
কমলাপুর মেট্রোরেল
বিমানবন্দর মেট্রো
সাভার–ভাটারা মেট্রোরেল
মেট্রোরেল সময়সূচি
সরকার পরিকল্পনা